নিজস্ব প্রতিবেদন | ই-বর্ধমান
ভারতীয় রেলের ওয়েটিং টিকিট সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের সমস্যার অবসান ঘটাতে বড়সড় পদক্ষেপ নিল রেল কর্তৃপক্ষ। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রতিটি ট্রেনের প্রতিটি শ্রেণিতে মোট আসনের সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত ওয়েটিং টিকিট ইস্যু করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীদের পক্ষ থেকে ওয়েটিং লিস্টের অনিশ্চয়তা নিয়ে যে অভিযোগ উঠছিল, এই নীতির মাধ্যমে তা কমানোর চেষ্টা হয়েছে।
✅ নতুন নিয়মে কী থাকছে?
রেল সূত্রে জানা গেছে, এবার থেকে শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক ওয়েটিং টিকিট ইস্যু হবে, যার ফলে টিকিট নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। তাছাড়াও চার্ট তৈরির আগেই, অর্থাৎ যাত্রার অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে, যাত্রী জানতে পারবেন তাঁর টিকিট কনফার্ম হয়েছে কি না—এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
✅ স্বস্তি কার, চিন্তা কার?
এই নিয়ম যাত্রীদের একাংশের কাছে স্বস্তির হলেও, অপর অংশের কাছে এটি বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশেষ করে—
- দূরপাল্লার ট্রেন যাত্রীদের জন্য, যেখানে আসন পাওয়া এমনিতেই কঠিন।
- শেষ মুহূর্তে যাত্রার পরিকল্পনা করা যাত্রীরা, যারা তৎকাল টিকিটের উপর নির্ভর করেন।
তৎকাল টিকিটেও একই সীমা প্রযোজ্য হওয়ায়, শেষ মুহূর্তের যাত্রীদের জন্য এটি নতুন সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
✅ বিশেষ শ্রেণির যাত্রীদের জন্য ছাড়
নারী, প্রবীণ নাগরিক ও দিব্যাংগ যাত্রীদের জন্য কিছু ছাড় থাকলেও, সাধারণ যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ সুবিধা থাকছে না। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, যদি কেউ ওয়েটিং টিকিট নিয়ে ট্রেনে উঠেন, তবে তাঁকে অতিরিক্ত ভাড়া ও জরিমানা দিতে হতে পারে—যা নিয়ে সামাজিক স্তরে প্রশ্ন উঠছে।
✅ এই নীতির লক্ষ্য কী?
রেলের দাবি, যাত্রায় শৃঙ্খলা আনা এবং যাত্রীদের নিশ্চয়তা প্রদানই এই নীতির মূল উদ্দেশ্য। আগে যেখানে যাত্রা নিশ্চিত না হওয়ার অনিশ্চয়তা নিয়ে যাত্রীরা মানসিক চাপে ভুগতেন, সেখানে এই নীতি একটা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—নিশ্চিত টিকিট না থাকলে ভ্রমণ নয়।
✅ জনমত বিভাজিত
এই নতুন নীতিকে অনেকেই স্বাগত জানালেও, অনেকে আবার বলছেন, এতে গরিব ও সাধারণ যাত্রীরা আরও কোণঠাসা হবেন। কারণ তারা প্রায়শই শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রেনে ওঠেন, বিশেষ করে অসুবিধার সময়ে। এখন থেকে তারা বিকল্প টিকিট পাবে না, এমনকি জরিমানা দিতেও হতে পারে।
🧭 শেষ কথা
রেলের এই নতুন পদক্ষেপ যে সুসংগঠিত ও দায়িত্বশীল যাত্রার বার্তা দিচ্ছে, তা অনস্বীকার্য। তবে নীতির বাস্তব রূপ কেমন হয়, তা সময়ই বলবে। যাত্রীর স্বস্তি যেন শৃঙ্খলার চাপে চাপা না পড়ে—এটাই এখন দেখার বিষয়।