নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে রাজ্য সরকার সাময়িক স্বস্তি পেলেও ১০০ দিনের কাজ বা মনরেগা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখনও কেন্দ্রীয় সদিচ্ছার উপর নির্ভর করছে। হাইকোর্ট রাজ্যের পক্ষেই রায় দিলেও প্রকল্প চালু করতে যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে সমঝোতা প্রয়োজন, তার কোনও নিশ্চিত দিশা এখনও দেখা যাচ্ছে না।
✅ আইনি ছাড়পত্র, কিন্তু বাস্তবিক অনুমতি?
হাইকোর্ট প্রকল্প চালুর নির্দেশ দিলেও কেন্দ্রের হাতে রয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার—শর্ত আরোপের ক্ষমতা। অর্থাৎ কেন্দ্র চাইলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত আরোপ করে প্রকল্পে অর্থ ছাড় করতে পারে, অথবা প্রকল্পে অংশগ্রহণে রাজ্যকে বাধ্য করতে পারে কিছু শর্ত মানতে।
এই অবস্থায় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—এই আইনি ছাড়পত্র ব্যবহার করে কেন্দ্র কী রাজনৈতিক কৌশল নেবে? পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যে প্রকল্প বন্ধ রাখা কিংবা দেরিতে চালু করা হলে, তা ভোটবছরে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসতে পারে।
🧾 বকেয়া অর্থ ও শ্রম বাজেট: রাজ্যের অঙ্কের খেলা
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের কাছে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের বকেয়া প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও এখনও নির্ধারিত হয়নি ২০২5-২৬ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্যের শ্রম বাজেট—যার ভিত্তিতে ঠিক হবে কতজন মানুষ প্রকল্পে কাজ পাবে।
রাজ্যের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, “আমরা কেন্দ্রকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি, শ্রম বাজেট অনুমোদনের অনুরোধ জানিয়েছি। এখনো কোনো পরিষ্কার জবাব পাইনি।”
⚖️ কেন্দ্রের দ্বিধা: রাজনৈতিক কৌশল না জনস্বার্থ?
মনরেগা আইন অনুসারে, প্রকল্প বন্ধ রাখা বা অর্থ বন্ধ করে দেওয়ার সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। আইনের ২৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কার্যকরী দায়িত্বে থাকা রাজ্য সরকারকে বাদ দিয়ে কোনও একতরফা সিদ্ধান্ত কার্যত অবৈধ। তবু, কেন্দ্রের কার্যকলাপে একপ্রকার দ্বিধা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ, ভোটের বছরে যদি প্রকল্প বন্ধ রাখা হয়, তাহলে রাজনৈতিকভাবে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বিজেপির উপরেই।
🧩 রাজ্যের পাল্টা প্রস্তুতি: কেভিয়েট ও চাপের কৌশল
এদিকে রাজ্য সরকারও থেমে নেই। হাইকোর্টের রায়কে সামনে রেখে তারা কেভিয়েট (আইনি প্রতিবিধান) দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে কেন্দ্র কোনও একতরফা আবেদন করলে রাজ্য তার বিরোধিতা করতে পারে। পাশাপাশি, কেন্দ্রের কাছে আরও একাধিক চিঠি তৈরি হচ্ছে—যেখানে আইনগত ও মানবিক যুক্তির মাধ্যমে প্রকল্প চালুর দাবি জানানো হয়েছে।
🔍 উপসংহার:
কেন্দ্র বনাম রাজ্য দ্বন্দ্বে যতোই রাজনৈতিক টানাপোড়েন থাকুক না কেন, প্রকৃত ক্ষতির মুখে পড়ছেন সাধারণ মানুষ—যারা এই প্রকল্পে নির্ভরশীল। আদালতের নির্দেশ আইনি স্বস্তি দিলেও, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত আর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে প্রকল্প কার্যকর না হলে, আগামী দিনে আরও জটিল হতে পারে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক।